সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের আমানত কীভাবে দেখাবেন কর নথিতে

সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকের আমানত কীভাবে দেখাবেন কর নথিতে

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যাঁরা এখনো রিটার্ন জমা দেননি, তাঁরা জেনে নিতে পারেন, কীভাবে আপনার সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকে জমানো টাকার হিসাব প্রদর্শন করবেন।

আপনার আয়কর ফাইলে যদি সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত, ডিপোজিট পেনশন স্কিমের (ডিপিএস) সঠিক বিবরণ না থাকে, তবে বিপত্তি। সঠিক হিসাব না দেওয়ার কারণে অতিরিক্ত আয়কর দিতে হতে পারে। এমনকি জেল বা জরিমানার শঙ্কাও থেকে যায়। তাই আয়কর নথিতে এসব হিসাব যথাযথভাবে তুলে ধরা জরুরি।

বিজ্ঞাপন
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কারও একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকে। কিন্তু আয়কর নথিতে সব তথ্য না দিয়ে রিটার্ন জমা দেন। এতে অনেক সময় দেখা যায়, আয়কর নথিতে যে আয় দেখানো হয়েছে, তার চেয়ে ব্যাংক লেনদেন বেশি। তাতেই বিপত্তিতে পড়ার শঙ্কা থেকে যায়। কারণ, আয়কর নথি বিভিন্ন সময় পর্যালোচনা করা হয়। যেমন:

 জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতিবছর কিছু ব্যক্তির আয়কর নথি নিরীক্ষা করে।

 কিছু নথি যুগ্ম কর বা অতিরিক্ত কর কমিশনারের পক্ষ থেকে নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে, যাকে আয়করের ভাষায় অর্থোডক্স বলা হয়।

 কর পরিদর্শন বিভাগ বা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল থেকেও কিছু আয়কর নথি পর্যালোচনা করা হয়।

 আয়কর আইন অনুযায়ী, ছয় বছর পর্যন্ত যেকোনো আয়কর নথি বা ফাইল পুনরায় উন্মোচন করা যায়।

 আয়কর বিভাগ বিভিন্ন সময় ব্যাংক হিসাব তলব করে। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের তথ্যভান্ডার এনবিআরের তথ্যভান্ডারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

 আয়কর নথিতে সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক হিসাব বাদ পড়লে সে ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ হারে কর দিয়ে তা এ বছর প্রদর্শন করা যাবে।

সঞ্চয়পত্র

 যে অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, সে বছরই নির্দিষ্ট হারে বিনিয়োগ রেয়াত বা অব্যাহতি সুবিধা নিতে হবে। অন্য কোনো বছর এ রেয়াত সুবিধা নেওয়া যাবে না।

 সঞ্চয়পত্র থেকে যে মুনাফা পাওয়া যায় এবং যে পরিমাণ অর্থ উৎসে আয়কর হিসেবে কেটে রাখা হয়, সেটাই চূড়ান্ত কর দায়। ধরা যাক, একজন করদাতা সঞ্চয়পত্র থেকে পাঁচ লাখ টাকা মুনাফা পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর হিসেবে ২৫ হাজার টাকা কেটে রাখা হয়েছে। ৫ লাখ টাকার মুনাফার বিপরীতে এই ২৫ হাজার টাকায় চূড়ান্ত কর দায়।

 সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ফটোকপি আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হয়।

 সঞ্চয়পত্র ভাঙানো, প্রাপ্ত সুদ ও উৎসে আয়কর কেটে রাখার প্রমাণপত্র বা সার্টিফিকেট রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হয়।

স্থায়ী ও মেয়াদি আমানত

আয়কর নথিতে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু মিশ্র ধারণা আছে। অনেকেই বিনিয়োগ হিসেবে এফডিআরকে বিবেচনা করেন। আবার অনেকে সম্পদ বিবরণীতে এ তথ্য দেখালেও প্রতিবছরের সুদ বা মুনাফা হিসাবভুক্ত করেন না। এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসাব বিবরণীর মতো এফডিআরের বিবরণী তুলতে হবে।

 যে বছর স্থায়ী আমানত খোলা হবে, সে বছরই তা সম্পদ বিবরণীতে দেখাতে হবে।

 কিছু এফডিআর থেকে প্রতিবছর সুদ বা মুনাফা তোলা যায়। এ সুদ বা মুনাফা আয়কর নথিতে অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে দেখাতে হবে।

 কিছু এফডিআরে মেয়াদ শেষে সুদ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে সঠিক তথ্য আনতে হবে। মেয়াদ শেষে মুনাফা দিলে সে ক্ষেত্রে যে বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে, সংশ্লিষ্ট কর বছরে এনক্যাশমেন্ট সার্টিফিকেট গ্রহণ করে তা আয়কর নথিতে দেখাতে হবে।

ডিপিএস

অনেক করদাতা মাসিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডিপিএস হিসেবে জমা রাখেন। কিছু ব্যাংক এই ডিপিএসের বিপরীতে মাসিক, ত্রৈমাসিক বা ষাণ্মাসিক বা বার্ষিক সুদ দিয়ে থাকে। কিছু ব্যাংক সুদ বা মুনাফার ওপর উৎসে কর কেটে রাখে। আবার কিছু ব্যাংক মেয়াদ শেষে ভাঙানোর সময় উৎসে আয়কর কেটে রাখে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে—

 বার্ষিক ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগসুবিধা পাওয়া যাবে।

 যদি প্রতিবছর সুদের ওপর উৎসে কর কেটে রাখা হয়, তাহলে সুদ বা মুনাফা অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় হিসেবে দেখাতে হবে। পাশাপাশি বছর শেষের স্থিতি আয়কর নথিতে সম্পদ বিবরণীতে দেখাতে হবে।

 মুনাফা বা সুদ ব্যাংক বিবরণীতে যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু উৎসে আয়কর কেটে রাখছে না, এমন পরিস্থিতিতে শুধু সম্পদ বিবরণীতে যে পরিমাণ টাকা জমা দেখানো হচ্ছে, সে পরিমাণ টাকা আগের বছর দেখানো থাকলে তার সঙ্গে যোগ করে এবার দেখাতে হবে। যে বছর মেয়াদপূর্তি হবে, সে বছর পুঞ্জীভূত মুনাফা অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে দেখাতে হবে।

 প্রতিবছরের ব্যাংক বিবরণী নিতে হবে। ডিপিএস ভাঙানোর সময় সনদ নিতে ভুল করা যাবে না।

ব্যাংক হিসাব

ব্যাংকে যে লেনদেন হবে, তা অবশ্যই আপনার আয়কর নথিতে প্রদর্শিত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অন্য কোনো প্রকার লেনদেন হলে তার যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত মোট সুদ বা মুনাফা অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে দেখাতে হবে। উৎসে কর প্রদেয় করের সঙ্গে সমন্বয় হবে।

Previous articleআয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত সম্পত্তি প্রদর্শন না করলে আছে বিপদ
Next articleসবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিল ফেসবুক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here