
শতভাগ কর অবকাশ তথা ট্যাক্স হলিডে সুবিধা থাকছে না। প্রথম বছর থেকেই কিছু কর দিতে হবে। নতুন আইনে শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রথম দুই বছরে মোট আয়ের ১০ শতাংশের ওপর কর দিতে হবে। বিদ্যমান আইনে প্রথম দুই বছরে শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা পান উদ্যোক্তারা।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর আইন ২০২২–এর খসড়া প্রকাশ করেছে। তাতে কর অবকাশ সুবিধা কমানোর কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে, এনবিআর আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে নতুন আইনের আওতায় রিটার্ন জমাসহ যাবতীয় কার্যক্রম শুরু করতে চায়। সে ক্ষেত্রে অবশ্য আগামী বাজেটের আগে জাতীয় সংসদে আয়কর আইন পাস হতে হবে।
আয়কর আইনের খসড়া অনুযায়ী, একটি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান চালুর পর প্রথম দুই বছর আয়ের ওপর ৯০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা পাবে। এর পরের দুই বছর (ব্যবসা শুরুর তৃতীয় ও চতুর্থ বছর) ৭৫ শতাংশ; পরের তিন বছর (পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম বছর) ৫০ শতাংশ এবং পরের তিন বছর (অষ্টম, নবম ও দশম বছর) ২৫ শতাংশ হারে কর অবকাশ সুবিধা মিলবে।
একটি শিল্প ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠান নতুন আইন কার্যকর হলেও এখনকার মতো ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাবেন। এটি পরিবর্তন করা হচ্ছে না। সাধারণত কর অবকাশ সুবিধার তালিকায় থাকা খাতগুলোর প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ও সেবা কার্যক্রম শুরুর বছর থেকে কর অবকাশ সুবিধা পায়। প্রথম বছর থেকে প্রতিষ্ঠান যত আয় করবে, বছরভিত্তিক আনুপাতিক হারে কম কর মওকুফ পাবেন।
বর্তমানে প্রথম বছর শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা মেলে। এরপর প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে কর অবকাশ সুবিধা কমতে থাকে। প্রথম বছর থেকে দশম বছর পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ওপর ১০ থেকে ৯০ শতাংশ কর ছাড় পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) শামস উদ্দিন আহমেদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আইনের খসড়া নিয়ে ব্যবসায়ী, করদাতা, অর্থনীতিবিদ, হিসাববিদসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কর অবকাশ সুবিধার নতুন নিয়ম চূড়ান্ত হয়নি। সবাই যদি যুক্তিসংগত সুপারিশ করেন, অবশ্যই তা বিবেচনা করে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে।’
কর অবকাশ সুবিধা পেয়ে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, বাইসাইকেলসহ বেশ কিছু দেশীয় শিল্পের বিকাশ হয়েছে। এসব পণ্যের দেশীয় বাজারের প্রায় সিংহভাগই স্থানীয় উদ্যোক্তারা নিয়ন্ত্রণ করছেন। বর্তমানে ৩১টি খাত কর অবকাশ সুবিধা পায়। আগে পেত ২৬টি খাত। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছর থেকে আরও পাঁচটি খাত যুক্ত হয়েছে। নতুন যুক্ত হওয়া খাতগুলো হলো গাড়িশিল্প, কৃষিপণ্যের শিল্পায়ন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, হাসপাতাল ও হালকা প্রকৌশল।
তালা ভেঙে তল্লাশির ক্ষমতা
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে এনবিআরের সহকারী কর কমিশনারের নিচে নয় এমন কর্মকর্তা কোনো করদাতার আয় অনুসন্ধানে তল্লাশি বা জব্দ করতে পারবেন। যেকোনো ভবন, স্থান, জাহাজ, যানবাহন বা বিমানে ঢুকেও আয় সম্পর্কিত রেকর্ড, অর্থ, মূল্যবান ধাতু, গয়না ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী বা বস্তু তল্লাশি করা যাবে। এমনকি কোনো দরজা, বাক্স, লকার, সেফ, আলমারি এসব খোলার চাবি পাওয়া না গেলে সেগুলো ভেঙে প্রবেশ বা তল্লাশি করতে পারবেন কর কর্মকর্তারা।
ইলেকট্রনিক রেকর্ড ও সিস্টেমে সংরক্ষিত তথ্য, ছবি বা অন্য কোনো উপাত্ত উদ্ধার করতে পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা ভেঙেও প্রবেশ করতে পারবেন কর কর্মকর্তারা। আয়সংক্রান্ত তথ্য কপি করতে পারবেন। জব্দ করা কাগজপত্র, দলিল ইত্যাদি ১৮০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখতে পারবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে সম্পদ জব্দের ৯০ দিনের মধ্যে আয় অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শুনানির সুযোগ দিতে হবে।
নতুন আয়কর আইনের খসড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন আইনটি ভ্যাট আইনের মতো লেজেগোবরে অবস্থা হয়ে আছে। ব্যবসায় পরিচালনার একটি সুনির্দিষ্ট মান ধরে করসংক্রান্ত আইন করা ঠিক হবে না। যেমন গ্রামীণফোনের মতো কোম্পানির সব হিসাবনিকাশ সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো। আবার একজন ছোট ব্যবসায়ীর পক্ষে হিসাববিদ রেখে হিসাব রাখা সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, সব অংশীজনের সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে নতুন আইনটি চূড়ান্ত করা উচিত।
বিদেশে গেলে সম্পদের হিসাব দিতে হবে
শুধু চিকিৎসা ও ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বিদেশে ঘুরতে বা ভ্রমণ করতে গেলেই আয়কর রিটার্ন জমার সময় ঘটিবাটিসহ সব সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে। নতুন আয়কর আইনের খসড়ায় এ শর্ত দেওয়া হয়েছে।
নতুন আয়কর আইন পাস হলে আপনার করযোগ্য আয় থাকুক কিংবা না থাকুক, দেশের সীমানা পেরোলেই আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে ফ্ল্যাট-জমি, আসবাব, ব্যাংক ব্যালান্সসহ যাবতীয় সম্পদের তথ্য জানাতে হবে। মনে রাখুন, কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় সংযোগ থাকায় এখন আর কেউ বিদেশ ভ্রমণ করে তা লুকাতে পারবেন না।
বর্তমানে ১৯৯৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ দিয়ে করসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।