মুঠোফোনে সঞ্চয় করছেন ৪০ হাজার বিকাশ গ্রাহক

মুঠোফোনে সঞ্চয় করছেন ৪০ হাজার বিকাশ গ্রাহক

সাবেক স্কুলশিক্ষক ও খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা ফাতেমা রকিব নিজের মুঠোফোনে বিকাশ অ্যাপসের মাধ্যমে গত সপ্তাহে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসিতে সঞ্চয়ী হিসাব খুলেছেন। কিস্তির টাকা জমা দিয়েছেন বিকাশের মাধ্যমেই।

তাঁর মতো বিকাশের প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহক এখন আইডিএলসির সঞ্চয়ী গ্রাহক। সুদও মিলছে আকর্ষণীয়, ৭ শতাংশ হারে। এ জন্য বিকাশের গ্রাহকদের কোথাও যেতে হচ্ছে না, কোনো নথিপত্রেও স্বাক্ষর করতে হচ্ছে না। অ্যাপসের মাধ্যমে নিজেরাই হিসাব খুলছেন। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পেরে খুশি গ্রাহকেরাও।

ফাতেমা রকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন ৬০০ টাকা বেতন পেতাম, তখন থেকেই সঞ্চয় করতাম। তবে বিকাশের এই প্রক্রিয়া একদমই সহজ। টাকা জমা দিতে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা নেই, এটাই বড় সুবিধা হয়েছে আমার জন্য।’

মুঠোফোনে সঞ্চয় সেবা দিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল সঞ্চয় সেবা চালু করে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড।

বিজ্ঞাপন
এ সেবার মাধ্যমে বিকাশ ব্যবহারকারীরা আইডিএলসি ফাইন্যান্সে বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয় হিসাব খুলতে পারছেন। নতুন ধরনের এ সেবা চালুর মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় আমানতকারীদের ভালো সাড়া মিলেছে।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয় সুবিধার আওতায় আনতেই এই সেবা চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিকাশ। শুরুতে কেবল কেওয়াইসি নিবন্ধন আছে, এমন বিকাশ হিসাবধারীরা সেবাটি নিতে পারতেন। তবে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে সব ধরনের বিকাশ হিসাবধারীর জন্য এই সেবা চালু করা হয়েছে।

জানা গেছে, নতুন এ সেবায় নারীদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সাড়া মিলেছে। এখন পর্যন্ত যত গ্রাহক এ সঞ্চয়ী হিসাব খুলেছেন, তাঁদের ৪০ শতাংশই নারী। আর এ সঞ্চয়প্রবণতা বেশি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের বিকাশ ব্যবহারকারীদের মধ্যে। এর মধ্যে বড় অংশই সঞ্চয় করছেন ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের বিষয়টি মাথায় রেখে।

বিকাশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৪০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৬৩ শতাংশই ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের উদ্দেশ্যে মুঠোফোনে মাসে মাসে ছোট ছোট অঙ্কের সঞ্চয় করছেন। আর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সঞ্চয় করছেন ২৪ শতাংশ গ্রাহক। শিক্ষা খরচের চাহিদা মেটাতে সঞ্চয় করছেন ৭ শতাংশ গ্রাহক। বাকি ৬ শতাংশ গ্রাহক অন্যান্য উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় করছেন মুঠোফোনে।

জানতে চাইলে বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের ধারণা বদলে দিতেই এই সেবা চালু করা হয়েছে। কারণ, বিকাশ হিসাব ব্যবহার করে মাত্র ২ মিনিটে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিকাশের মাধ্যমেই মাসিক কিস্তি জমা দেওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া স্কিমের সময় শেষে লাভসহ মূল টাকা আবার বিকাশ হিসাবে ফেরত দেওয়া হবে। ফলে গ্রাহকদের কোথাও যেতে হবে না টাকা জমা বা মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত পেতে।

আলী আহম্মেদ জানান, ‘সেবাটি চালু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দেশের সব কটি জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গ্রাহক এ সেবা নিয়েছেন। এই সেবা সঞ্চয়ের পদ্ধতিকে আরও সহজ, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও লাভজনক করে তুলবে। আমাদের বিশ্বাস, দেশের সব পেশার মানুষের ছোট ছোট মাসিক সঞ্চয়ের ভরসাস্থল হয়ে উঠবে আইডিএলসি-বিকাশের এই সেবা।’

গ্রাহকের যত সুবিধা

গ্রাহকেরা যেকোনো স্থান থেকে বিকাশ অ্যাপে কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করে মাসিক কিস্তিভিত্তিক এ সঞ্চয় সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। এ জন্য একজন গ্রাহককে বিকাশ অ্যাপের ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয়’ বা সেভিংস অপশনে গিয়ে সেবাটি চালু করতে হবে। এই সেবার আওতায় একজন বিকাশ গ্রাহক বর্তমানে মাসিক ৫০০, ১ হাজার, ২ হাজার এবং ৩ হাজার টাকা কিস্তিতে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ চার বছর মেয়াদে সঞ্চয়ী প্রকল্প চালু করতে পারছেন। কোনো গ্রাহক যদি ২ বছরের জন্য মাসে ১ হাজার টাকা করে কিস্তিতে জমা দেন, তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি সুদসহ পাবেন ২৫ হাজার ৭৭১ টাকা।

প্রতি মাসের নির্ধারিত তারিখে বিকাশ হিসাব থেকে সঞ্চয়ের কিস্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইডিএলসিতে জমা হয়ে যাবে। আর বিকাশ হিসাবে প্রয়োজনীয় টাকা রাখার জন্য নির্ধারিত তারিখের আগেই গ্রাহককে বার্তা দেওয়া হবে। গ্রাহকেরা মোট জমার পরিমাণ, সঞ্চয়ের মেয়াদ, মুনাফার পরিমাণসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য বিকাশ অ্যাপ থেকেই সরাসরি দেখতে পাবেন।

সঞ্চয়ের মেয়াদ পূরণ হওয়ার পর মুনাফাসহ সব টাকা আবার গ্রাহকেরা তাঁদের বিকাশ হিসাবে পেয়ে যাবেন। সঞ্চয়ের যেকোনো পর্যায়ে টাকা তুলে নিতে চাইলে তা-ও বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমেই উত্তোলন করা যাবে।

Previous articleসোয়া কিলোমিটারে খরচ বাড়ছে ৭৫০০ কোটি টাকা
Next articleবিনা শুল্কে পর্যটকবাহী গাড়ি আমদানির সুযোগ দাবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here