
মঙ্গলবার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ হতে পারে, যদিও সম্প্রতি আইএমএফের পূর্বাভাস, প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৯ শতাংশ। মহামারির বাস্তবতায় পরিস্থিতিতে যা যথেষ্ট আশাপ্রদ বলে মনে করছে কেন্দ্র।
এবারের বাজেটে ভারতের কেন্দ্র সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ নজর দিয়েছে। বাজেটে ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচার বা মূলধনি ব্যয় খাতে অর্থবরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, যার অধিকাংশই খরচ হবে রাস্তা, সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দাবি, অর্থনীতির ভিত মজবুত করার পাশাপাশি বাজেটে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগও।
চলতি অর্থবছরে ভারতের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো হলেও অর্থনীতিবিদেরা অভিযোগ করে আসছেন, শুধু ওপরের স্তরের মানুষেরা এই সুবিধা পাচ্ছেন। গত কয়েক মাস দেশটিতে বেকারত্বের হারও বেশি। সে জন্য কর্মসংস্থানে গতি আনতে এবার মোদি সরকার অবকাঠামো ও পরিষেবা খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে।
নির্মলা সীতারমণ বলেন, ‘এবারের বাজেটে থাকছে আগামী ২৫ বছরের ব্লুপ্রিন্ট।’ সে জন্য এবারের বাজেটে অবকাঠামো নির্মাণে ২০ হাজার কোটি রুপি ও পরিষেবা খাতে ৫ লাখ কোটি রুপি বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেন তিনি।
নাগরিকের জীবনের মানই শুধু নয়, মানোন্নয়নের সুযোগ ও অধিকার বাড়ানোর প্রয়াসের কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী, যেমন গতিশক্তি প্রকল্প। আগামী কয়েক বছরে এ প্রকল্পে ৬০ লাখ কর্মসংস্থান করতে চায় সরকার। পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামেও ডিজিটাল–সংযোগের ব্যবস্থা এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছে সরকার, যাতে শহর ও গ্রামের মধ্যে অন্তত এই পরিষেবার সুযোগের পার্থক্য না থাকে।
আগামী অর্থবছরের জন্য নির্মলা সীতারমণ ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার কোটি রুপির বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে ঋণ ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি রুপি।
এবারের কেন্দ্রীয় বাজেট জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের সহায়ক হবে বলেও সংসদে দাবি করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাজেট সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা, এবারের বাজেট এই শতকের ভয়াবহতম বিপর্যয়ের আবহে নতুন উন্নয়নের সূচনা। বুধবার কেন্দ্রীয় বাজেট সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানাবেন তিনি।
তবে ভারতের এবারের বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য সুখবর নেই অন্তত করের দিক থেকে। বাজেটে বেতনভুক মধ্যবিত্তের করছাড়ের ক্ষেত্রে নতুন কোনো ঘোষণা দেননি অর্থমন্ত্রী। মঙ্গলবার সংসদে বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। সেখানে তিনি জানান, আয়করের ধাপ (স্ল্যাব) একই থাকছে।
ভার্চু৵য়াল, ডিজিটাল সম্পদ বিক্রি বা অধিগ্রহণ থেকে আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ কর বসছে। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ কর–ব্যবস্থায় সংস্কারের দিকে নজর দিয়েছে কেন্দ্র। লোকসভায় সীতারমন ঘোষণা দেন, কো-অপারেটিভ সোসাইটির করের হার করা হচ্ছে ১৫ শতাংশ। তেমনি স্টার্ট–আপ ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক বছরের ট্যাক্স ইনসেনটিভ বা কর অবকাশ পাবেন।
আসছে ডিজিটাল রুপি
তবে এবারের বাজেটে মোড় পরিবর্তনকারী ঘোষণা একটিই দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। সেটি হলো ডিজিটাল রুপি প্রবর্তণের ঘোষণা। রিজার্ভ ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত এই মুদ্রার লেনদেনের তথ্য রাখা হবে ব্লক চেইন পদ্ধতিতে। পাশাপাশি ভার্চ্যুয়াল, ডিজিটাল সম্পদ বিক্রি বা অধিগ্রহণ থেকে আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ করও বসানো হবে।
ইতিমধ্যে ভারতের শীর্ষ ব্যাংক এই মুদ্রা বাজারে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জানা গেছে, নগদ অর্থের সমতুল্য হবে এই ডিজিটাল মুদ্রা। এতে দেশটির আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ হবে বলে ধারণা করা যায়, জিডিপিতে যার প্রভাব অনুভূত হবে।
ভারতের সরকার–ঘেঁষা অর্থনীতিবিদেরা দাবি করছেন, আগামী কয়েক বছর উন্নয়নশীল দেশের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারত নেতৃত্ব দেবে। তা সত্যি হলেও সমাজের নিচুতলার মানুষ বস্তুত কতটা উপকৃত হবেন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।