বসুন্ধরা সোনা পরিশোধনাগারের ঋণের ঝুঁকি কমানোর পরামর্শ

বসুন্ধরা সোনা পরিশোধনাগারের ঋণের ঝুঁকি কমানোর পরামর্শ

দেশে প্রথমবারের মতো সোনা পরিশোধনাগার কারখানা নির্মাণ করবে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড নামের এই পরিশোধনাগার নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার অর্থায়ন করতে চায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংক।

তবে প্রকল্প নতুন হওয়ায় এই বিনিয়োগের ঝুঁকি বেশি। তাই ঝুঁকি কমাতে সিন্ডিকেট ঋণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকেও সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে এক অনুষ্ঠিত হওয়া বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ পরামর্শ দিয়েছেন। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, ডেপুটি গভর্নররাসহ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সোনা পরিশোধনের প্রকল্প দেশে একেবারেই নতুন। তাই এর ঝুঁকিও বেশি। তাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংক এখানে বিনিয়োগ করলে এর শুধু ঝুঁকি রাষ্ট্রের ওপরই পড়ে। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাংক পাঁচটি হলেও এর মালিক একটিই, অর্থাৎ ‘রাষ্ট্র’। তাই এই প্রকল্পে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকেও যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রজেক্টর মেশিনারি কেনা বাবদ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখানে ব্যাংক ও গ্রাহকের বিনিয়োগের পরিমাণ ৬০ এবং ৪০ শতাংশ হারে নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলোর দাবি ছিল ৭০ ও ৩০ শতাংশ।

জানা গেছে, সোনা পরিশোধনাগার কারখানা নির্মাণ সিন্ডিকেট ঋণের নেতৃত্বে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। সবচেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা ব্যাংক। সিন্ডিকেট বা ঋণজোটের অপর দুই ব্যাংক হলো সরকারি খাতের রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।

সরকারি ব্যাংকগুলো এই প্রকল্পে তাদের মোট সম্পদের ১০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না। কারণ খেলাপি ঋণের হার বেশি হওয়ায় বাৎসরিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুযায়ী মোট সম্পদের ১০ শতাংশের বেশি একক গ্রাহককে দেওয়ার অনুমতি নেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। তবে যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কম তারা একজন গ্রাহকের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি হয়েছেন।

জানা গেছে, ৩০০ ফুট ঢাকা-পূর্বাচল হাইওয়ের পাশে ভাটারা থানার জোয়ার সাহারা মৌজায় ৪৭০ শতক জমিতে গড়ে তোলা হবে বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড। সেখানে ভূমি উন্নয়ন শেষে এখন নির্মাণকাজ চলছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি প্রকল্প বাস্তবায়নে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ওয়ার্ল্ডএরা করপোরেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আর্থিক মূল্য ২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ডান অ্যান্ড ব্র্যাডশিটের তথ্য অনুযায়ী, ওয়ার্ল্ডএরা করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা।

চুক্তি অনুযায়ী, ওয়ার্ল্ডএরা করপোরেশন বসুন্ধরার সোনা পরিশোধনাগারটির যন্ত্রপাতি ক্রয়, প্যাকিং চার্জ, তদারকি মাশুল, আমদানিতে পরিবহন ব্যয়, কন্ট্রাক্টর ফি, স্থাপন ও কমিশনিং মাশুলসহ বিভিন্ন ধরনের মাশুল খরচ দেবে।

প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলে সোনা পরিশোধনাগারটিতে প্রতিদিন ২০০ কেজি গোল্ডবার বা সোনার বার, ১৫০ কেজি গোল্ড জুয়েলারি, ৭০ কেজি সিলভার বা রৌপ্য উৎপাদিত হবে। এই প্রকল্পে জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৮৫৫ কোটি টাকা। আর সোনা পরিশোধনাগারের যন্ত্রের মূল্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা গেছে, ঋণের মেয়াদ ৭ বছর, সুদের হার ৯ শতাংশ। প্রকল্পটিতে প্রথম দুই বছর ঋণের কিস্তি পরিশোধে বিরতি পাবে বসুন্ধরা।

বসুন্ধরার এই কারখানা চালু হলে সোনা পরিশোধনের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির পর তা দিয়ে কারখানাটিতে সোনার বার ও কয়েন উৎপাদন করা হবে। সেগুলো রপ্তানির পাশাপাশি দেশেও অলংকার তৈরিতে ব্যবহৃত হবে।

দেশে অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির সুযোগ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত জুন মাসে স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ সংশোধন করে। সেই আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনা পরিশোধনের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে সোনা আমদানির অনুমতি নেবে, সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

সংশোধিত স্বর্ণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিশ্বে অলংকার উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং ভারত, চীন অন্যতম। ২০১৯ সালে বিশ্বে মেশিন ও হাতে তৈরি সোনার অলংকারের বাজার ছিল ২২ হাজার ৯৩০ কোটি মার্কিন ডলারের। ২০২৫ সালে বাজারের আকার বেড়ে ২৯ হাজার ১৭০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে।

Previous articleইসলামী ব্যাংকগুলোর তথ্য চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
Next articleসোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here