
দুই বন্ধুর একই নাম, রেজাউল ইসলাম। তবে ডাকনাম আলাদা রানা ও রেজা। স্কুলজীবনে পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা একই সঙ্গে। নামে মিল থাকায়, তাঁদের মধ্যে ছিল গভীর বন্ধুত্ব। তবে মাধ্যমিক পাস করার পর রেজা ভর্তি হন কলেজে। আর রানার পড়াশোনায় ছেদ পড়ে আর্থিক সংকটে।
রেজা বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি প্রকল্পের অধীনে প্রযুক্তিবিদ হিসেবে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করছেন। কিন্তু স্কুলজীবনের বন্ধু রানার দুর্দশার কথা ভোলেননি। বছর তিনেক আগে রানাকে নিয়ে তিনি গ্রামে গড়ে তোলেন একটি ছাগলের খামার। বর্তমানে সেই খামারে নানা জাতের ছাগলের সঙ্গে পালন করা হচ্ছে মরুর দুম্বা।
এই দুই বন্ধুর বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সাতদরগা মিয়াপাড়া গ্রামে। উপজেলা সদর থেকে খামারের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। সম্প্রতি ওই খামারে গিয়ে কথা হয় দুই বন্ধুর সঙ্গে। তাঁরা স্কুলজীবনে পড়াশোনা, বন্ধুত্ব, বেড়ে ওঠা ও খামার গড়ে তোলার গল্প শোনান প্রতিবেদকদের।
রেজাউল ইসলাম ওরফে রেজা বলেন, তাঁদের দুই বন্ধুর বাড়ি পাশাপাশি। নামে মিল থাকায় অন্যদের তুলনায় তাঁদের বন্ধুত্ব একটু গাঢ়। পীরগাছা অনন্দানগর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে একসঙ্গে এসএসসি পাসের পর আর্থিক সংকটে যখন রানা কলেজে ভর্তি হতে পারলেন না, তখনই মনটা বিষিয়ে উঠেছিল।
রেজা বলেন, স্নাতকোত্তর শেষ করে চুক্তিভিত্তিক একটি কাজ পান তিনি। এর পাশাপাশি কিছু করতে চেয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল রানাকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা। পরে ইউটিউবে বিভিন্ন উদ্যোক্তার ভিডিও দেখে ২০১৬ সালের দিকে ছাগলের খামার করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে ২০ হাজার টাকায় ১০টি ছাগল কেনেন দুজন। গ্রামের বাড়িতে রানা এগুলো পালন করতেন। দুই বছর পর খামারে ছাগলের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫১।
একপর্যায়ে ছাগল বিক্রি করে লাভ হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা। এ টাকা খরচ করেননি। এরপর নতুন কিছু করার চিন্তা থেকে ২০১৮ সালে দুম্বা পালন শুরু করেন। এ সময় উন্নত জাতের কিছু ছাগলও কেনা হয়। রানা বলেন, ওই সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা দুই বন্ধু ভারতের রাজস্থান থেকে প্রথমে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় চারটি দুম্বা কেনেন। সাত মাস পর দুম্বা চারটি বাচ্চা দেয়। এরপর খামারে বাড়তে থাকে দুম্বার সংখ্যা।
রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, চারটি দুম্বা থেকে তিন বছরে দুম্বা পেয়েছেন ২৫টি। এর মধ্যে ১৪টি দুম্বা বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। লাভ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। বর্তমানে খামারে থাকা ১০টি দুম্বার দাম ১৮ থেকে ২০ লাখ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সামসুজ্জামান বলেন, দুম্বা ও ছাগল একই সঙ্গে পালনে কোনো সমস্যা নেই। টিকা নিলে রোগবালাই হয় না।