দুই কোটি টাকায় মিলল ৫১ কোটি টাকার সুফল

দুই কোটি টাকায় মিলল ৫১ কোটি টাকার সুফল

মাত্র দুই কোটি টাকা খরচ করে ই-রিটার্ন ব্যবস্থা চালু করেছে এনবিআর। এর আগে ৫১ কোটি টাকা খরচ করেও সুফল মেলেনি।

  • মাত্র ১০ মাসে এনবিআরের একটি দল ই-রিটার্ন ব্যবস্থা চালু করেছে।
  • প্রথম বছরেই ৬১ হাজার ২০৩ জন করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন।

৫১ কোটি টাকা খরচ করে ২০১৬ সালে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলে। এই প্রকল্পের ভিয়েতনামি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বুঝিয়ে না দিয়ে চলে গেছে। এরপর আর কেউ অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারেননি। এগুলো পুরোনো খবর।

২০২০ সালের নভেম্বর মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগের একটি বিশেষ দল নতুন অনলাইন ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে। এ জন্য এনবিআরের মাত্র দুই কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ফলে এই মৌসুমে আবার অনলাইনে নিবন্ধনসহ আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়। এতে করদাতারাও ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ের চেয়ে মাত্র দুই কোটি টাকা খরচেই মিলল বড় সুফল।

জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে এনবিআরকে দুই কোটি টাকা অনুদান দেয়। এই টাকা দিয়ে আয়কর বিভাগ অনলাইনে নিবন্ধন, রিটার্ন জমা, কর পরিশোধসহ আয়করসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার আধুনিক ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এ জন্য আয়কর বিভাগে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। দলটি বহুপ্রতীক্ষিত অনলাইন ব্যবস্থা উদ্ভাবন নিয়ে কাজ শুরু করে।

মাত্র ১০ মাসেই তারা পুরো ই-রিটার্ন ব্যবস্থাটি প্রস্তুত করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে আয়কর বিভাগের দলটিকে সিনেসিস আইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষজ্ঞ সহায়তা দেয়। গত ১০ অক্টোবর অনলাইনে ই-রিটার্ন দেওয়ার নতুন ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থায় অনলাইনে নিবন্ধন নেওয়া, রিটার্ন প্রস্তুত ও জমা এবং কর পরিশোধসহ এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যায়। এমনকি রিটার্ন জমার প্রাপ্তিস্বীকারও পাওয়া যায়।

এ সম্পর্কে এনবিআরের আয়কর বিভাগের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, করদাতার সঙ্গে কর কর্মকর্তাদের দেখাসাক্ষাৎ যত কম হবে, ততই ভালো। তাই অটোমেশন ব্যবস্থায় বেশি জোর দিতে হবে। অনলাইনে রিটার্ন জমাসহ সব কাজ করার সুযোগ দেওয়া হলে এমনিতেই অনিয়ম-দুর্নীতি কমে যাবে।

এবার দেখা যাক এবার অনলাইনে কত রিটার্ন জমা পড়ল। আগের অনলাইন ব্যবস্থায় ২০১৬ সাল থেকে পরের চার অর্থবছরে গড়ে ছয় হাজারের মতো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দিয়েছিলেন। অথচ গত অক্টোবরে নতুন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাটি চালুর পরের আড়াই মাসে ৬১ হাজার ২০৩ জন করদাতা ই-রিটার্ন দিয়েছেন। তাঁরা কর কার্যালয়ে না গিয়ে ঘরে বসেই রিটার্ন জমা দিয়েছেন।

আবার ৭৯ হাজার ৭৪৫ জন করদাতা রিটার্ন জমা না দিলেও রিটার্ন প্রস্তুত করেছেন। এ ছাড়া ই-রিটার্নের জন্য নিবন্ধন নিয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৫২১ জন করদাতা। এদিকে নির্ধারিত সময়ে যাঁরা রিটার্ন জমা দিতে পারেননি, তাঁরা অনলাইনে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে পেরেছেন। সেখানেও বেশ সাড়া পড়েছে। যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গেই তা মঞ্জুর হয়ে যায়।

নতুন অনলাইন ব্যবস্থা চালুর সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ অনলাইন পদ্ধতি। স্বল্প খরচে সম্পূর্ণ দেশীয় উপায়ে তা উদ্ভাবন করা হয়েছে। এখানে শুধু রিটার্ন দেওয়া নয়; আপনি অতীতের কোনো বছরের রিটার্ন জমা এবং প্রাপ্তিস্বীকারের তথ্যও প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। এখন সরকারি কর্মকর্তাসহ সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক ও চাকরিজীবীরা সহজেই অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।

কাজে আসেনি ৫১ কোটি টাকা

কর বিভাগে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর জন্য এনবিআর ২০১১ সালে ‘স্ট্রেনদিনিং গভর্ন্যান্স ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এ জন্য খরচ করা হয় ৫৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আওতায় বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স (বাইট্যাক্স) সিস্টেম চালু করা হয়। ভিয়েতনামের এফটিপি এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম করপোরেশন নামক একটি কোম্পানি এই সিস্টেম বা সফটওয়্যার তৈরির কাজ পায়।

আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫১ কোটি টাকায় কাজটি দফারফা হয়। সেই কাজের অংশ হিসেবে অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার সফটওয়্যার, করদাতার তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়। ২০১৬ সালেই সফটওয়্যারটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। ওই বছরের নভেম্বর মাসে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজের রিটার্ন জমা দিয়ে অনলাইন ব্যবস্থাটি উদ্বোধন করেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম বছরে তেমন একটা রিটার্ন জমা পড়েনি। তবে পরের তিন অর্থবছরে করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন দিতে পেরেছেন। এর মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাঁচ হাজারের মতো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দিয়েছেন। এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ হাজার ৮৪৮ জন ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ হাজার ২০৭ জন করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন।

এই ব্যবস্থা চালুর ভিয়েতনামি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এনবিআরের চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত। তাই মেয়াদ শেষ হতেই তারা চলে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে তারা এনবিআরকে সফটওয়্যারের কাজ বুঝিয়ে দেয়নি। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থাটি বন্ধ থাকে। ওই বছর কেউ অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারেননি।

Previous articleকালোটাকা সাদা করায় এবার আগ্রহ কম
Next articleচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য ২,৪৬৩ কোটি টাকার বাজেট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here