ঝুলে আছে অনেক প্রস্তাব, সিদ্ধান্ত নিতেই বছর পার

ঝুলে আছে অনেক প্রস্তাব, সিদ্ধান্ত নিতেই বছর পার

পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়ে দুই বছর আগে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি আইএম পাওয়ার।

ইলেকট্রিক ট্রেন নির্মাণে সাড়ে ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। রেল খাতে বিশাল এ বিদেশি বিনিয়োগটি এখনো আলোচনার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। আইএম পাওয়ারের এ বিনিয়োগ নেওয়া হবে কি না, দুই বছরেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়।

শুধু রেল খাতেই নয়; স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে বড় বড় বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগের প্রস্তাব ঝুলে আছে কয়েক বছর ধরে। একটিও আলোর মুখ দেখেনি। এসব বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মাধ্যমে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন সংস্থাটি নিজেদের মতো করে চেষ্টা করেছে বিদেশি বিনিয়োগ বাস্তবে রূপ দিতে। তারাও ব্যর্থ হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর অসহযোগিতার কারণে বড় বড় বিনিয়োগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিডার কর্মকর্তারা।

ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মাহতাব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে আইএম পাওয়ার সাড়ে ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছিল দুই বছর আগে। দুই পক্ষ একাধিকবার বৈঠকও করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারছে না। আমরা আবারও রেলওয়ের সঙ্গে বৈঠক করব।

২০২০ ও ২০২১—ওই দুই বছরে যে কয়টি বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে, সেসব কোম্পানির তালিকা সংগ্রহ করেছেন এ প্রতিবেদক। করোনাকালে চীন ও সৌদি আরব থেকে আলাদা দুটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব এসেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ ও থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের আদলে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল তৈরি করতে চায় তারা।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যত মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, তাঁদের কথা মাথায় রেখে হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল দেশ দুটি। কিন্তু সৌদি আরবের ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন ও চীনের চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিএমইসি) দুটি প্রস্তাব নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুই প্রস্তাবের ক্ষেত্রে বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।

সৌদি আরবভিত্তিক কোম্পানি অ্যাকুয়াপাওয়ার বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ১০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চায়। এ জন্য তারা শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে জমি চেয়েছে। এখন পর্যন্ত জমির ব্যবস্থা করতে পারেনি শিল্প মন্ত্রণালয়। ফলে অ্যাকুয়াপাওয়ারের বিনিয়োগ প্রস্তাবটি ঝুলে আছে। বাঁশখালীতে এলএনজিভিত্তিক ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র করার আরেকটি প্রস্তাব রয়েছে সৌদি আরবের অ্যাকুয়াপাওয়ারের।

সেখানেও জমি নিয়ে আছে জটিলতা। এ প্রস্তাব নিয়ে আগামী সপ্তাহে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আরেক দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে তুরস্কভিত্তিক কোম্পানি আর্চেলিক সিঙ্গার বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত জমির নিশ্চয়তা পাচ্ছে না তারা।

দেশে কেন বিদেশি বিনিয়োগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না, এর কারণ জানতে কথা হয় একাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, যে মন্ত্রণালয় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে, তাদের অসহযোগিতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কাজে লাগানো যায় না।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও জমির প্রাপ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেও বিদেশি বিনিয়োগ কাজে লাগানো যায় না। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারি কর্মকর্তারা চিন্তা করেন স্বল্প মেয়াদে। দীর্ঘ মেয়াদে তাঁরা কোনো চিন্তা করেন না। বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে কর্মকর্তাদের তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যেসব সরকারি দপ্তর বিদেশি বিনিয়োগের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে, তাদের আরও আন্তরিক হতে হবে। বিডা শুধু বলতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব আনতে পারে। এর বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা দ্রুত সিদ্ধান্ত চায়। দুই বছর ঘুরিয়ে তারপর না বলা হবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ না আসার অন্যতম কারণ মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা।

মন্ত্রণালয়গুলোর নীতিকৌশল সাংঘর্ষিক। এক ছাদের নিচে সব সেবা দিতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা কখনো বসে থাকে না। তারা সময় নেয় কম। সিদ্ধান্ত চায় দ্রুত। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত আসে দেরিতে।

Previous articleকানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চলছে
Next articleকরপোরেট কর কমানোর সুপারিশ এমসিসিআইয়ের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here